১৫ আগস্টে যা ইচ্ছা তাই করেছে মেজর ডালিম
Comments are closedচাকুরীচ্যুত মেজর ডালিমের স্টেনগান দেখে ভয়ে ৭৫ এর ১৫ আগস্ট রাস্তা ছেড়ে দেন অনেক অফিসার। অনেকে কোনো কথাই বলতে পারেন নি। যা ইচ্ছা তাই করেছেন ডালিম।
ডালিমের স্টেনগানের সামনে অফিসারদের অবস্থা কিরকম ছিলো সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়। প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে তিনি ১৫ আগস্ট ভোরে অনুমান সকাল ৬টায় কর্নেল আব্দুল্লাহর টেলিফোন পেয়ে রেডিও অন করে তিনি মেজর ডালিমের কণ্ঠে শুনেই চমকে উঠেন। তখনকার বর্ণনা দিয়ে কর্নেল হামিদ বলেন: উন্মুক্ত স্টেনগান হাতে মেজর ডালিম নেমে চীৎকার করে বলে: শাট আপ, গেট অ্যাওয়ে ফ্রম হিয়ার। ‘এতে তখন এক ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দায়িত্বরত অফিসাররা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে যে যেদিকে পারে ছুটে পালায়। জানিয়ে হামিদ জানান: মেজর ডালিম সশস্ত্র অবস্থায় সরাসরি জেনারেল শফিউল্লাহর রুমে ঢুকে পড়েন। কিছুক্ষণ পর মেজর ডালিম স্টেনগানের মুখে শফিউল্লাহকে রুম থেকে বাইরে নিয়ে আসে। পেছনে জেনারেল জিয়াউর রহমানসহ অন্য সিনিয়র অফিসাররা ছিলেন।
কর্নেল হামিদসহ অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্যে স্পষ্ট, বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পরও সেনা সদর কিংবা ঢাকার ব্রিগেড তাৎক্ষণিকভাবে আর্মি হেডকোয়ার্টার বা ব্রিগেডের নিজস্ব নিরাপত্তায় তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থাই নেয় নি। যারা দেশের রাষ্ট্রপতিকে সপরিবার হত্যা করতে পারে, তারা যে সেনা সদরেও নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের চেষ্টা করবে; সে কথা কেউ ভাবেনও নি। অথচ এর মধ্যেই তিন ঘণ্টা সময় পার হয়ে গিয়েছিলো। জেনারেল শফিউল্লাহ ৪৫ নম্বর সাক্ষী হিসেবে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। খোলা স্টেনগান নিয়ে মেজর ডালিমের সেনা প্রধানের অফিস কক্ষে ঢুকে যাওয়ার যে কথা কর্নেল হামিদ জানিয়েছেন, তার পরের চিত্র পাওয়া যায় শফিউল্লাহর বক্তব্যে। সেসময় তার কক্ষে ডেপুটি চীফ জেনারেল জিয়া এবং সিজিএস ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ বসেছিলেন। শফিউল্লাহ জানান, ৪৬ ব্রিগেডেকে সক্রিয় করার জন্য তখন খালেদ মোশাররফকে তাগিদ দিচ্ছিলেন তিনি।
এই সময় দরোজা ধাক্কা দিয়ে মেজর ডালিম ১০/১৫ জন সৈন্যসহ সশস্ত্র অবস্থায় ঢুকে পড়ে তার দিকে অস্ত্র তাক করে বলে জানান শফিউল্লাহ। ডালিম চাকুরিচ্যুত অফিসার হলেও সেদিন ইউনিফর্ম পরা ছিলো। শফিউল্লাহ ডালিমকে বলেন: ডালিম, আমি এই অস্ত্র দেখে এবং ব্যবহার করে অভ্যস্ত। তুমি যদি এটা ব্যবহার করতে এসে থাকো, তা হলে ব্যবহার করো। আর তা না হলে যদি কথা বলতে এসে থাকো, তা হলে তোমাদের সৈন্যদের অস্ত্র বাইরে রেখে আসো। শফিউল্লাহর ভাষ্যমতে: এরপর ডালিম তার অস্ত্রটি নিচের দিকে মুখ করে বলে, স্যার, প্রেসিডেন্ট ওয়ান্টস ইউ ইন দ্যা রেডিও স্টেশন। শফিউল্লাহ তখন বলেন, প্রেসিডেন্ট তো মারা গেছেন। জবাবে ডালিম বলে, স্যার ইউ শুড নো খন্দকার মুশতাক ইজ দ্যা প্রেসিডেন্ট নাউ। শফিউল্লাহ তখন বলেন, খন্দকার মুশতাক মে বি ইউর প্রেসিডেন্ট, হি ইজ নট মাইন। তখন ডালিম বলে, স্যার, ডোন্ট মেক মি ডু সামথিং ফর হুইচ আই ডিড নট কাম। শফিউল্লাহর দাবি, এরপর তিনি ডালিমকে বলেন, তোমার যা খুশি করতে পারো।
একথা বলে শফিউল্লাহ অফিস থেকে বের হয়ে ৪৬ ব্রিগেডের দিকে রওনা হন বলে তার সাক্ষ্যে জানিয়েছেন। ডালিমও তার সৈন্য-সামন্ত এবং অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত গাড়ি নিয়ে তার পেছনে যায় তিনি উল্লেখ করেন। আগামীকাল শুনবো কিংকর্তব্যবিমূঢ় ব্রিগেড কমান্ডারদের কথা।